বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান ও সিনেমাশিল্পের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা ও চলচ্চিত্র সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ডের নেতারা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের এ অনুভূতি ব্যক্ত করেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা দেড়টায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে ভগ্নদশা থেকে উত্তরণের পথে নেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা এত কমে গিয়েছিল, আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। স্রষ্টার কৃপা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও তথ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় হলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ আবার হলমুখী হচ্ছে। বাণিজ্যিক ছবিতে অনুদান দেওয়ার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এই উত্তরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। সে জন্য তথ্যমন্ত্রী বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।’
পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘যাঁরা বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান দেওয়া বন্ধের কথা বলেন, তাঁরা কি চান না দেশের সিনেমাশিল্প বেঁচে থাকুক, মানুষ সিনেমা হলে যাক। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান দেওয়ায় যে চলচ্চিত্রে আবার প্রাণ এসেছে, তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। করোনার মধ্যে সিনেমার খরায় অনুদানই ছিল বৃষ্টি।’
প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, চলচ্চিত্রের কোন ক্যাটাগরিতে কখন কী পরিমাণ অনুদান দেওয়া প্রয়োজন, সেটি দেশ ও সিনেমাশিল্পের উন্নতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। বাণিজ্যিক সিনেমা দেশের চলচ্চিত্রের প্রাণ, কোটি কোটি মানুষের বিনোদন, আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। এতে অনুদান শুধু দেওয়া নয়, অনুদানের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করলে সিনেমাজগতের উন্নতি হবে।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চলচ্চিত্র নেতাদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্র প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প যাত্রা শুরুর পর বহু কালজয়ী ছবি যেমন জন্ম দিয়েছে, বহু কালজয়ী নায়ক-নায়িকারও জন্ম দিয়েছে এবং আমাদের অনেক ছবি স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম, স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে অবদান রেখেছে। বহু ছবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের ছবি এখন শুধু আমাদের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাসহ অনেক দেশে প্রদর্শিত হয়।’
একসময় অনুদানের অনেক সিনেমা হলে মুক্তি পেত না, অনেকগুলো আর্টফিল্মের জন্য অনুদান দেওয়া হলেও বানায়নি বা বানালেও সেটা কেউ জানে না—এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের কথা জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব ছবি বানানো হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি, তিনবার নোটিশের মধ্যে সাড়া না দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে অনুদানের সিনেমা প্রথমে কমপক্ষে ১০টি ও পরে কমপক্ষে ২০টি হলে মুক্তি দেওয়া নীতিমালায় যুক্ত করেছি। সিনেমাশিল্প বাঁচাতে বাণিজ্যিক ছবির প্রতি আমরা জোর দিই। আর্টফিল্মেও প্রতিবার আমরা অনুদান দিয়েছি, ডকুমেন্টারিতেও দেওয়া হচ্ছে, যা নীতিমালাতেও আছে। অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করে আগের ১০ কোটিকে এখন ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। একটি ছবির জন্য ৩০ লাখ, ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হতো, যা ৭৫ লাখে উন্নীত করেছি।’
দেশে হলের সংখ্যা বাড়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, সিনেমা হল ৬৫টি থেকে এখন ২১০টি হয়েছে, এক বছরের মধ্যে আরও ১০০টা বাড়বে। সিনেমা হলের জন্য বিশেষ ঋণ তহবিলের কথা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিনেপ্লেক্স, সিনেমা হল নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারে গঠিত এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাংকে দরখাস্ত পড়েছে। চলচ্চিত্রশিল্পের সুদিন ফিরে এসেছে।
বাণিজ্যিক ছবিতে অনুদানের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ছবিতে অনুদান দেওয়া বিশ্ব পরিস্থিতি ও করোনা প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ আছে। সেটা সবাইকে স্বীকার করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আপনাদের হাত ধরে আমাদের চলচ্চিত্র আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে। এখন বিশ্ব অঙ্গনে কিছুটা জায়গা করে নিয়েছে, সেটি আরও বিস্তৃত হবে, সেটিই আমার প্রত্যাশা।’
সেন্সর বোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে সিনেমাশিল্পের জন্মের পর থেকেই সেন্সর বোর্ড ছিল, সেন্সর বোর্ড থাকতে হবে। বোর্ড যাতে অহেতুক কোনো কিছু না করে, সেটি অবশ্যই আমরা নজরে রাখি। কোনো সিনেমা যদি আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এবং কেউ যদি কোনো সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছে বলে দাবি করার পর দেখা যায় যে সেখানে পুরো সত্য ঘটনাটা আসেনি, তখন তো সেন্সর বোর্ড প্রশ্ন রাখবেই। এমন যা পাওয়া গেছে, সেটি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
চলচ্চিত্র নেতারা পরে তথ্য ও সম্প্রচারসচিব মো. মকবুল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিভেদ ভুলে সবাইকে এক হয়ে সিনেমাশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশে থাকতে হবে, বলেন সচিব।
চিত্রগ্রাহক সংস্থার সভাপতি আবদুল লতিফ, মহাসচিব আসাদুজ্জামান, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ শহীদুল্লাহ; এডিটরস গিল্ড সভাপতি আবু মুসা; পরিচালক সমিতির সহসভাপতি ছটকু আহমেদ, উপমহাসচিব কবিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সচিব শাহীন কবির; শিল্পী সমিতির সহসভাপতি রিয়াজ, চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার, সংগীতা, অপু বিশ্বাস, কেয়া, অভিনেত্রী জেসমিন মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।