পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তীতে ভূমিকা রাখবে – Sharemarket24.com

পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তীতে ভূমিকা রাখবে

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪

এলডিসি পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে। তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে অন্যতম।

সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রফতানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহের অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়নো, খেলাপী ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাণিজ্যবিষয়ক লজিস্টিক সেবা দিতে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যার উত্তরণ অপরিহার্য, সেই সঙ্গে শিল্পখাতের ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি, এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নির্ধারণের আরও সচেতন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। সর্বোপরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডসমূহে সবধরনের সেবা প্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে রপ্তানি খাতে ততবেশি সাফল্য আসবে। সেই সঙ্গে শুল্ক হার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হয়, তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার ওপর জোরারোপ করেন।

তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে প্রস্তুতির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময়ে নেই, সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে, তবে বেসরকারিখাত সামনের দিনগুলেতে একটি টেকসই দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী অংশগ্রহণ করেন।

বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদান প্রত্যাহার করা হলো। যদি এখাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, এমতাবস্থায় তিনি এ খাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রফতানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কীভাবে তাদের রফতানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারণের ওপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মতো শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা-প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রফতানি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। সম্ভাবনাময় খাত সমূহের বিকাশে ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন প্রভৃতি হতে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জ্বালানিসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘হাই এন্ডেড’ খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং পণ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পটিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার শিল্পে রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।